আজকের কিশোর-কিশোরী

ঋতুস্রাবজনিত বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান

ঋতুস্রাবজনিত বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান

লজ্জাবশত নারীদের অনেকেই ঋতুস্রাবজনিত সমস্যাগুলো কারো সাথে সহজে শেয়ার করতে চান না, আবার অনেকে সঠিকভাবে এই সময়টায় উদ্ভূত সমস্যাগুলো কি কি কারণে হয়ে থাকে বা এর সমাধান ই বা কি , এ সম্পর্কে জানেন না । মূলত , তাদের জন্যই আজকের এই আলোচনা ।

যে বিষয় গুলো আলোচনা করা হয়েছে

  1. পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব কি ?
  2. অনিয়মিত পিরিয়ড বা ঋতুস্রাবঃ
  3. অস্বাভাবিক বা অনিয়মিত ঋতুস্রাবের কারণঃ
  4. অনিয়মিত পিরিয়ডের ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলোঃ
  5. আপনার ঋতুস্রাব অনিয়মিত , যেভাবে বুঝবেনঃ
  6. চিকিৎসাঃ
  7. অনিয়মিত ঋতুস্রাব প্রতিরোধে আপনার করণীয়ঃ

পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব কি ?

ঋতুস্রাব হচ্ছে রক্তপাতসহ জরায়ুর পর্দা (এন্ডোমেট্রিয়াম) সরে বা খসে যাওয়া। একজন মহিলার সংজনন সময়কালে, গর্ভাবস্থার সময় ছাড়া, মাসিক আবর্তে এটা হয়। ঋতুস্রাব শুরু হয় বয়ঃসন্ধিকালে (মেনার্চি-তে) এবং স্থায়ীভাবে বন্ধ হয় রজোনিবৃত্তির (মেনোপজের) সাথে। সাধারণত একজন নারীর জীবনে ঋতুচক্র  শুরু হওয়ার পর থেকে  ২১ দিন থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে যেটি হয় সেটিই ঋতুস্রাব বা স্বাভাবিক ঋতুস্রাব । কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই এই সময়ে না হয়ে ২১ দিনের আগে বা ৩৫ দিনের পরে হয়, তখন সেটিকে অনিয়মিত ঋতুস্রাব বলে।

অনিয়মিত পিরিয়ড বা ঋতুস্রাবঃ

কমবেশি সব বয়সী নারীর শরীরেই অনিয়মিত ঋতুস্রাব একটি প্রচলিত সমস্যা। তবে সাধারণত অনিয়মিত ঋতুস্রাব  যৌবনের প্রারম্ভে এবং যৌবন শেষে হতে পারে। যৌবনের প্রারম্ভে সাধারণত ১২ থেকে ২০ বছর বয়সে কারো শরীরের ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন যদি অপরিপক্ব (প্রিমেচিউর) থাকে তবে অনিয়মিত ঋতুস্রাব হয়। আবার নারী শরীরে মেনোপজ শুরু হওয়ার আগে এ ধরনের সমস্যা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতার কারণেও এই সমস্যা হতে পারে বলে মনে করেন চিকিৎসকগণ ।

অস্বাভাবিক বা অনিয়মিত ঋতুস্রাবের কারণঃ

প্রধানত ছয়টি কারণে অনিয়মিত ঋতুস্রাব হতে পারে, যথাঃ

১। শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা গেলে অর্থাৎ এনিমিয়া হলে অনিয়মিত মাসিক হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

২। যারা বিবাহিত তারা হঠাৎ জন্মনিয়ন্ত্রক ওষুধ বন্ধ করে দিলে হতে পারে।

৩। নারীত্ব নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন এর তারতম্যের কারণে এই সমস্যা হয়।

৪। ইউটেরাস বা জরায়ুর বিভিন্ন জটিলতার কারণে হতে পারে।

৫। গনোরিয়া, সিফিলিস ইত্যাদি যদি কোন পুরুষের থাকে , তবে সহবাসের সময় তার শরীর থেকে আসা জীবাণুর কারণে হতে পারে।

৬। মেনোপজের সময়ের আগে আগে অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে । সাধারণত ৫০ বছর থেকে মেনোপজ বা একবারে পিরিয়ড বন্ধ হয়। অনেক সময় ৪০ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যেই মেনোপজ শুরু হয়ে যেতে পারে। একে প্রি-মেনোপজ বলে। এই প্রি-মেনোপজ-এর সময় পিরিয়ড অনিয়মিত হয়।

এছাড়াও অতিরিক্ত মেদ বাড়লে বা কারো শরীরে টিউমার , ক্যান্সার ইত্যাদি থাকলে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম , জরায়ুর টিউমার ও এন্ডোমেট্রিওসিস , থাইরয়েডের সমস্যা , জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল এবং কপাটির ব্যবহার করলে তাদের ক্ষেত্রেও অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে ।

অনিয়মিত পিরিয়ডের ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলোঃ

যাদের প্রতিমাসে নিয়মিত ঋতুস্রাব হয় না অথবা এক মাসে রক্তপাত হলে হয়তো আরেক মাসে হয় না বা দুই-তিন মাস পরপর হয়ে থাকে তাদের হয়ত সন্তান ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায় বা অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ হতে পারে। সাধারণত অনিয়মিত পিরিয়ডে রোগীর শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে । মেজাজ খিটখিটে থাকে এবং অস্বস্তিবোধ কাজ করে । প্রচুর মাথাব্যথা ও হতে পারে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ।

আপনার ঋতুস্রাব অনিয়মিত , যেভাবে বুঝবেনঃ

ঋতুস্রাব ২১ দিনের আগে এবং ৩৫ দিনের পরে হলে , ঋতুস্রাবের সময় বেশি রক্তপাত হলে অথবা সাত দিনের বেশি সময় ধরে ঋতুস্রাব হলে বুঝবেন , আপনার ঋতুস্রাব অনিয়মিত । এছাড়া ঋতুস্রাবের সময় খুব ব্যথা হলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন ।

চিকিৎসাঃ

সাধারণত চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী  হরমোনাল থেরাপি দেওয়া হয়। কারো ক্ষেত্রে যদি বেশি ওজনের জন্য এই সমস্যা হয় তবে ডায়েট ও ব্যয়াম করতে বলা হয়। অনেকের ক্ষেত্রে মেয়ের পাশাপাশি মাকেও পরামর্শ (কাউন্সিলিং) দেওয়া হয়। আর সন্তান ধারণক্ষম বয়সে সমস্যার ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয় । বেশি রক্তপাত হলে আয়রন সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনো ওষুধ সেবন করা উচিত নয়

অনিয়মিত ঋতুস্রাব প্রতিরোধে আপনার করণীয়ঃ

চিকিৎসকের কাছে যেতে না চাইলে আপনি আগে থেকেই কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারেন । এতে আপনি নিজেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারবেন অনিয়মিত পিরিয়ডের বিরুদ্ধে । যেমনঃ

১। সবসময় আয়রন জাতীয় খাবার খাবেন ,যেমন, কচু, পালংশাক, ডিম , দুধ ইত্যাদি যাতে করে শরীরে পরিমিত পরিমাণে রক্ত থাকে।

২। মুটিয়ে যাওয়া চলবে না মোটেই । সবসময় শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

৩। অতিরিক্ত টেনশান অনেক সময় অনিয়মিত ঋতুস্রাবের কারন হয়ে দাঁড়ায় । তাই সবসময় মানসিক চাপ মুক্ত থাকার এবং হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করতে হবে।

৪। শয্যাসঙ্গী নির্বাচনে সতর্ক থাকতে হবে ।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *