আজকের কিশোর-কিশোরী

নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কি করণীয় ?

নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কি করণীয় ?

নারী মানেই স্নেহ, ভালবাসা। কাছের মানুষ-গুলোর প্রতি যত্ন, আদর আর মায়া। সাংসারিক হাজারটা দায়িত্বের মাধ্যমে সবাইকে আগলে রাখা। তবে আজকালকার দিনে এই ধারণা কিন্তু অনেকটাই বদলে গিয়েছে। এখন বাঙালী নারী আর চার-দেয়ালে সীমাবদ্ধ নেই। ঘরের সীমানা পেড়িয়ে তাঁরা আজ সাফল্যের সিঁড়ি-গুলো বেয়ে উঠে যাচ্ছে সাবলীল-ভাবে, শত বাধা-বিপত্তি ভেঙে দিয়ে।
তবুও এখনো অনেক নারী-ই নিজেদের ব্যাপারে কিছুটা উদাসীন। প্রতিদিনের অফিস-বাসার কতশত কাজের মাঝে হয়তো সময়ই করে উঠতে পারেন না। দিনে দিনে পুরো ব্যাপারটা মন থেকে বলতে গেলে হারিয়েই যায়।

যে বিষয় গুলো আলোচনা করা হয়েছে

  1. নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কি করণীয়
  2. সঠিক ও পরিমিত খাদ্যাভ্যাস
  3. নিয়মিত শরীরচর্চা
  4. পরিমিত বিশ্রাম
  5. ভিন্ন কিছু করা

দৈনন্দিন ব্যস্ততা থাকবেই। নারী হিসেবে তাঁদের দায়িত্বগুলো পালন করে যেতে হবে। এই ব্যাপারে হয়তো কোন বিতর্কের সুযোগ নেই। কিন্তু পাশাপাশি তাঁদের নিজেদের যত্নের দিকেও খেয়াল রাখাটা সমান, কখনোবা হয়তো একটু বেশিই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সবার যত্নের পাশাপাশি নিজের ও যত্ন নেয়া চাই । শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য প্রতিদিন একজন নারী নিজের যত্নে কি কি করতে পারেন, চলুন জেনে নিই ।

. সঠিক পরিমিত খাদ্যাভ্যাসঃ

রুটিন-মাফিক, পরিমিত খাদ্যাভ্যাস ই মূলত শারীরিক, তথা মানসিক সুস্থতার সবচেয়ে বড় নিয়ামক। বয়সের সাথে সাথে বিভিন্ন হরমোন-জনিত কারণে মেয়েদের একটু মোটা হয়ে যাবার ধাঁচ থাকে। পরবর্তীতে শরীর ভারী হয়ে যাবার জন্য নানাবিধ শারীরিক জটিলতা দেখা যায়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস থাকলে সহজেই এড়িয়ে যাওয়া যায় এই ভারী হয়ে যাবার প্রবণতা ।
খাবার নির্বাচন করার সময় হাই-প্রোটিন ও তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে খাদ্য-তালিকায় ভেজিটেবল, ফল-সহ পুষ্টিকর খাবার বেছে নিন। যেমন, গরু বা খাসির মাংসের বদলে বেছে নিতে পারেন সয়াবিন বড়ি, পালং শাক , পটল বা উচ্ছে । প্রথম প্রথম একটু কঠিন মনে হলেও পুরো ব্যাপারটিই আসলে অভ্যাসের উপর নির্ভরশীল। একবার অভ্যাস হয়ে গেলে পুরো ব্যপারটিই হয়ে ওঠে আসলেই সহজ।
সঠিক খাদ্যতালিকা নির্বাচন এর পাশাপাশি সঠিক সময়ে খাচ্ছেন কি না সেটি ও সমান গুরুত্বপূর্ণ । অনেক সময়ই দেখা যায়, সকালের ব্যস্ততায় অনেক নারীই ঠিক মতো ব্রেকফাস্ট না করেই কাজে চলে যাচ্ছেন। আবার হয়তো সময় মতো লাঞ্চ করছেন না। এটা একেবারেই ঠিক নয়। তাই একটু সচেষ্ট হয়ে রুটিন-মাফিক খাওয়ায়া-দাওয়া করলে নিজের যত্ন অনেকাংশেই নিশ্চিত করা যায়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, যেটা অনেক সময়ই নারীরা খেয়াল করেন না, তা হলো পর্যাপ্ত পানি পান করা। এ ব্যাপারেও একটু খেয়াল করলেই সুস্থতা অনেকটাই নিশ্চিত করা যায়।

. নিয়মিত শরীরচর্চাঃ

প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘন্টা হালকা এক্সারসাইজ অথবা মেডিটেশন সত্যিই শরীর ও মন, দুটোই নিমিষেই করে ফেলতে পারে চাঙা। এক্সারসাইজ বলতে একেবারেই জিম-এ গিয়ে হেভি ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করে শরীরচর্চা করতে হবে এমনটি কিন্তু নয়।
প্রতিদিন ভোরবেলা কানে হেডফোন লাগিয়ে নিয়ে নিজের পছন্দের গান শুনতে শুনতে একটানা কোন পার্ক অথবা নিদেনপক্ষে ঘরের ভেতরেই হেঁটে বেড়ালেই শরীর অনেকটাই ফিট রাখা সম্ভব। প্রতিদিন এক্সারসাইজ-এর জন্য হার্ট-রেট বজায় থাকবে, শরীরের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াও স্বাভাবিক থাকবে। যার এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। পরবর্তীতে এজিং-এর মতো ভাবনাদায়ক বিষয়গুলো খুব সহজেই শুধুমাত্র একটিভ লাইফস্টাইল এবং এক্সারসাইজ-এর মাধ্যমেই এড়িয়ে যাওয়া যায়।
বর্তমানে অনেক নারীকেই মেডিটেশন করার ব্যাপারে উৎসাহী হতে দেখা যাচ্ছে। ভাবনায় আটকে না থেকে শুরু করে দেয়াই ভালো। আর মেডিটেশন যদি নাও শুরু করা হয়, তবে দেহ-মনের আড়ষ্টতা দূর করতে বডি ম্যাসাজ-ও বেশ কার্যকরী ।

. পরিমিত বিশ্রামঃ

পর্যাপ্ত ও শান্তির ঘুম না হলে মানসিক প্রশান্তি আসবে না। স্বাভাবিকভাবেই দায়িত্বের চাপে চলে আসে অতিরিক্ত টেনশন। পরিমাণমতো ঘুমালে অনেকখানিই কমে যায় টেনশন । কিন্তু শুধু পর্যাপ্ত ঘুম নয়, প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিশ্রামেরও। এক্ষেত্রে রুটিন-মাফিক বেশি রাত না জেগে তাড়াতাড়ি বিছানায় চলে যাওয়া এবং খুব ভোরে দিন শুরু করলে শরীর ও মন দুটোই চাঙা রাখা সম্ভব। সকাল সকাল দিন শুরু করলে সারাদিনে কাজ শেষ করার সময়ও বেশি পাওয়া যায়।

. ভিন্ন কিছু করাঃ

নৈমিত্তিক ব্যস্ততা থাকবেই সকল নারীর । কিন্তু এরপরও নিজেদের মনে আনন্দের খোরাকের জন্যই যদি মাঝে মাঝে কিছুটা সময় তাঁরা নিজেদের পছন্দ মতো কিছু একটা করা সত্যিই উচিত। সেটা হতে পারে বই পড়া, গান শোনা , গান করা বা মুভি দেখা বা যেটাই মন চায়, সেটাই করতে হবে ।
আমাদের অনেকেরই মা-খালারা কাঁথা সেলাই, রান্না ইত্যাদি কাজে বেশ পারদর্শী। তাঁদের এই শখটি ধরে রাখতে একটু উৎসাহ আমরা সবাই চাইলেই দিতে পারি। মনে রাখা জরুরি, জীবনটা শুধু দায়িত্ব পালনের জন্যই নয়- পাশাপাশি এনজয় করাটাও সবারই প্রাপ্য। বাড়ির ছাদে অথবা বারান্দায় একটি ছোট বাগানের পরিচর্যা করলেও মন অনেক ভালো থাকে।

শেষকথা, স্বাস্থ্যের প্রতি সবারই খেয়াল রাখা দরকার কিন্তু একজন নারীকে যেহেতু পরিবারের সবারই খেয়াল রাখতে হয়, সেহেতু তার স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ রাখা সবচেয়ে জরুরী ।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *