আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশগুলিতে আদা পাওয়া যেত যেরকম চীন, ভারতবর্ষ, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ইত্যাদি। আদার গুনাগুন দেখে পরবর্তীকালে সারা বিশ্বে আদার চাষ শুরু হয় বিশেষ করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলিতে।
চীন এবং ভারতে আদা বহু পৌরাণিক যুগ ধরে ভেষজ ঔষধ রূপে ব্যবহৃত হয়। আদা খাওয়ার উপকারিতা আমাদের বিভিন্ন রোগ এবং সমস্যার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই আদাকে প্রাকৃতিক ভেষজ ঔষধ বলা হয়। আদা খুব সহজে বাজার বা মার্কেটে পাওয়া যায় এবং এর মূল্য খুবই কম।
আদা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের অবগত হওয়া খুব বেশি প্রয়োজন। সাধারণত আমরা বিভিন্ন তরকারি এবং স্পাইসি ফুড রান্না তে আদা ব্যাবহার করে থাকি, কিন্তু আদার সঠিক ব্যাবহার সম্পর্কে আমাদের জেনে রাখা উচিৎ তাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয়…….
আদা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে।
আসুন আমরা জেনেনি ১০০ গ্রাম আদার পুষ্ঠি গুনাগুণ বা নিউট্রেশনাল ফ্যাক্ট
- ক্যালোরি ৮০
- প্রোটিন ১.৮২ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট ১৭.৮ গ্রাম (ডায়েটারি ফাইবার ২ গ্রাম)
- টোটাল ফ্যাট ০.৭৫ গ্রাম
- জল ৭৮.৯ গ্রাম
এছাড়াও আছে প্রচুর ভিটামিন এবং মিনারেল যেরকম,
- ভিটামিন C
- ভিটামিন B৬
- ভিটামিন E
- ভিটামিন K
- ক্যালসিয়াম
- আয়রন
- ম্যাগনেসিয়াম
- ফসফরাস
- টাশিয়াম
- সোডিয়াম
- সেলেনিয়াম
- কপার ইত্যাদি।
আদা খাওয়ার উপকারিতা কি ?
আদার মধ্যে ফেনোলিক ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান রয়েছে যার নাম জিনজেরল। আর এই জিনজেরল এর কিছু ঔষধিক গুণাগুন আছে। আদার মধ্যে থাকা এই ফাইটোকেমিক্যাল গুলো বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস এর বিরুদ্ধে লড়তে পারে তাই সাধারণ সর্দি কাশি এবং জ্বরে আদা খাওয়ার উপকারিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের মধ্যে অনেকের সকালে বমি ভাব হবার প্রবণতা থাকে, এছাড়াও অনেক গর্ভবতী মায়েদের এবং কঠিন রোগে আক্রান্ত রোগীদের এমনকি যারা ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত বা কেমোথেরাপি চলছে তাদের মধ্যেও বমি হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেড়ে যায়। তাই আমরা যদি নিয়মিত এবং পরিমাণমতো আদা খাই বা গ্রহণ করি তাহলে আমাদের বমি হওয়ার প্রবণতা কমে যায় এবং সামান্য পরিমাণ আদা খাওয়া বা গ্রহণ করা আমাদের জন্য নিরাপদ।
সময় মত খাওয়ার না গ্রহণ করলে বা অনিয়ম হলে আমাদের পেটের মধ্যে গ্যাসের সমস্যা হয়। পরবর্তী সময় এই গ্যাসের কারণে আমাদের শরীরের মধ্যে অন্যান্য রোগ দেখা দেয়। আদার মধ্যে কিছু এনজাইম উপাদান রয়েছে যা আমাদের পেটের মধ্যে হওয়া গ্যাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। ওই এনজাইম উপাদান গুলির জন্য আমাদের খাদ্যনালীর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং পেটের নানান সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি পাই। এমনকি নিয়মিত আদা গ্রহণ করলে আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য বা কনস্টিপেশন হবার প্রবণতা কমে যায় তাই আদার রসের উপকারিতা আমাদের পেটের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যদি আমাদের শরীরে ফ্রি-রেডিকেলস বাড়তে থাকে এবং সেই ফ্রি-রেডিকেলস বিষাক্ত বা টক্সিক পদার্থ আমাদের শরীরে ছড়াতে থাকে তাহলে আমাদের ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। আমরা যদি নিয়মিত ২ গ্রাম কাঁচা আদা গ্রহণ করতে পারি তাহলে আমাদের ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা কমে যায় তার কারণ আদাতে কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরে ফ্রী রেডিকেলসকে বাড়তে দেয় না এবং আমাদের বিভিন্ন রকম ক্যান্সার হবার প্রবণতাকে কম করে যেরকম, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ক্যান্সার, প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার এবং লিভার ক্যান্সার। তাই কাঁচা আদা খাওয়ার উপকারিতা ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কিছু মানুষের শরীরে আর্থ্রাইটিস এর ব্যথা হয়ে থাকে যেরকম হাঁটুতে ব্যথা, কুনুই এ ব্যথা, কোমরে ব্যথা ইত্যাদি। আমরা যদি নিয়মিত আদা গ্রহন করি তাহলে আমাদের বিভিন্ন ধরনের ব্যথা বা পেইন হবার প্রবণতা কমে যায় তার কারণ আদার মধ্যে আন্টি–ইনফ্লামেটরি উপাদান রয়েছে যা ব্যথার জন্য ভীষণভাবে কার্যকরী।
আদার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন মিনারেল বা খনিজ পদার্থ এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং আন্টি ভাইরাল উপাদান রয়েছে। বিশেষ করে ভিটামি সি ও অন্যান্য উপাদান গুলি নিয়মিত গ্রহণ করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধি পায়। আমাদের খুব সহজে এবং ঋতু পরিবর্তনের ফলে সাধারণ সর্দি-কাশি জ্বর হবার প্রবণতা খুবই কমে যায়।
নিয়মিত কাঁচা আদা খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে LDL বা ব্যাড কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কমতে থাকে। কাঁচা আদার রস আমাদের শরীরে রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ রাখে। তাই আমাদের টাইপ টু ডায়াবেটিস হবার প্রবণতা কমে যায় ফলে আমাদের হৃদয় সংক্রান্ত রোগ কম হয় যেরকম হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক।
আমরা যদি নিয়মিত এক টুকরো কাঁচা আদা চিবিয়ে খাই বা গ্রহণ করি তাহলে আমাদের মুখের মধ্যে কোন সংক্রমণ বা ইনফেকশন হবার প্রবণতা কমে যায় এবং আমাদের মুখের মধ্যে দুর্গন্ধ থাকে না তার কারণ আদাতে এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে যা আমাদের মুখের মধ্যে হওয়া কোনো সংক্রমণ বা ইনফেকশন কে পুরোপুরি কম করতে পারে।
২০১২ তে এক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে নিয়মিত আদা গ্রহন করলে আমাদের স্মৃতিশক্তি অনেক উন্নত হয়। অত্যাধিক চিন্তার কারণে আমাদের মাথা যন্ত্রণা বাড়তে পারে এবং এলজাইমার সমস্যা ও হতে পারে কিন্তু আমরা যদি নিয়মিত কাঁচা আদা গ্রহণ করি তাহলে আমাদের ওই জাতীয় সমস্যা হবার প্রবণতা কমে যায়।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা বিভিন্ন রকমের ফাস্টফুড এবং খুব বেশি পরিমাণ ফ্যাট যুক্ত খাবার খেয়ে থাকি যার ফলে আমাদের শরীরে ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যায়। পরবর্তী সময় আমাদের ওজন বৃদ্ধি পায় এবং ওবিসিটি রোগ হবার সম্ভাবনা ও বেড়ে যায়। কিন্তু আমরা নিয়মিত কাঁচা আদা খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে ফ্যাট বা চর্বির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে ফলে আমাদের ওজন বৃদ্ধিহয় না এবং ও বিসিটি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
আদা খাওয়ার নিয়ম কি ?
আমরা বিভিন্নভাবে আদা খেয়ে বা গ্রহণ করে থাকি যেরকম,
সকালে গ্রিন টি সাথে সামান্য একটু আদার কুচি এবং মধু মিশিয়ে পান করতে পারি, যা আমাদের সর্দি-কাশি এবং জ্বরের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এক পানীয় উপাদান।
আমরা দুপুরে এবং রাতে খাবারের পর এক টুকরো কাঁচা আদা সরাসরি গ্রহণ করতে পারি, যা আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং মুখের মধ্যে কোন সংক্রমণ বা ইনফেকশন হতে দেয় না।
আমরা বিভিন্ন খাবার বা তরকারিতে আদা মিশিয়ে রান্না করতে পারি, তার সুগন্ধ এবং পুষ্টিগত গুনাগুনের জন্য।
আদা খাওয়ার অপকারিতা কি ?
সাধারণত আমরা যদি প্রতিদিন দুই গ্রামের কম আদা গ্রহণ করি তাহলে আদা খাওয়ার কোন অপকারিতার দিক থাকে না। কিন্তু আমরা যদি খুব বেশি পরিমাণ আদা খাই বা গ্রহণ করি তাহলে আদা খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে যেরকম,
কিছু মানুষের আদা খেলে বা গ্রহণ করলে এলার্জি দেখা দিতে পারে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে ছোট ছোট দাগ বা চিহ্ন দেখা দিতে পারে।
খুব বেশি পরিমাণ আদা খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের পেটে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় তার কারণ আদাতে প্রচুর পরিমাণ আন্টি মাইক্রোবোল উপাদান রয়েছে এবং কাঁচা আদা খুব ঝাল হয় যা খুব বেশি আমাদের পেটের জন্য ভালো না।
নিয়মিত আদা খেলে আমাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে কিন্তু খুব বেশি আদা গ্রহণ করলে বা খেলে আমাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ কমতে থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য খুব একটা ভালো নয়। চার বছরের ছোট বাচ্চাদের এবং গর্ভবতী মায়েদের কাঁচা আদা গ্রহনের পূর্বে অবশ্যই একবার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত।
আদা কি ভাবে রাখবো ?
বাজার বা মার্কেট থেকে আদা কিনে এনে পরিষ্কার কাপড়ে মুছে আলো ছায়া জায়গাতে রেখে দেবো। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আদা কিনে এনে যদি আমরা ধুয়েনি তাহলে ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে তা নাহলে আদা তে পচন ধরে যাবে। শুকনো আদা অনেকদিন ধরে রেখে দিলে অংকুরিত হয়ে যেতে পারে তাই আমরা চেষ্টা করবো যে ২০ থেকে ৩০ দিন এর মধ্যে কিনে আনা আদা ব্যাবহার করে ফেলার।
- ডক্টরস টিভি ওয়েবসাইট লিংক : www.doctorsbd.tv, www.doctorstvbd.com
- ডক্টরস টিভি ইউটিউব চ্যানেল লিংক : youtube.com/c/Doctorstvchannel
- ডক্টরস টিভি ফেসবুক প্রোফাইল লিংক : fb.com/doctorstvbdprofile
- ডক্টরস টিভি ফেসবুক পেজ লিংক : fb.com/doctorstvofficial
- ডক্টরস টিভি ফেসবুক নিউজ পেজ লিংক : fb.com/doctorstvnews
- ডক্টরস টিভি ফেসবুক গ্রুপ লিংক : fb.com/groups/doctorstv
- ডক্টরস টিভি টুইটার লিংক : twitter.com/doctorstvbd