প্রধান খবরপ্রেসত্রিুপশন

টাইফয়েড কি এবং টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ গুলো কি কি

টাইফয়েড বা টাইফয়েড  জ্বর কি ?

টাইফয়েড (typhoid) জ্বর বাংলাদেশে খুবই কমন একটি রোগ। টাইফয়েড জ্বর স্যালমোনেলা টাইফি নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমণে হয়ে থাকে। দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে প্রধানত দেহে এই জীবাণু ছড়ায়। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার লোকজনের টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তস্রোতে ও অন্ত্রনালীতে এই ব্যাটটেরিয়া অবস্থান করে এবং দূষিত খাবার ও পানি গ্রহণের মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিযা দেহে প্রবেশ করা জীবাণুগুলো গুণিতক আকারে বেড়ে গিয়ে রক্তস্রোতে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে জ্বরসহ নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়।

টাইফয়েড বা টাইফয়েড জ্বরের কারণ ..

টাইফয়েডের অন্যতম কারণ হলো দূষিত খাবার গ্রহণ। এ ছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে এবং পানির মাধ্যমেও এই রোগের জীবাণু ছড়ায়। এ রোগের জটিলতাও নেহাত কম নয়। রক্তক্ষরণ, অগ্নাশয়ে প্রদাহ, মেরুদণ্ডে সংক্রমণ এমনকি কিডনিতেও বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে টাইফয়েড থেকে।

টাইফয়েড জ্বরের ছড়ানোর মাধ্যম…

প্রধানত দূষিত পানি ও খাবার গ্রহণের মাধ্যমেই এই জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি উদাসীনতার কারণেও এটি শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এছাড়াও টাইফয়েড জ্বর হতে আরোগ্য লাভ করেছেন কিন্তু এই ব্যাকটেরিয়া বহন করছেন এমন কিছু সংখ্যক ব্যক্তিও এই রোগের বাহক হতে পারে। যেভাবেই এই জীবাণু শরীরে শরীরে প্রবেশ করুক না ঢুকার পর তা বৃহদান্ত্রকে আক্রমণ করে। এছাড়া এই ব্যাকটেরিয়া শরীরের পিত্তথলিতে জমা থাকে এবং উপযুক্ত পরিবেশ পেলেই কেবল আক্রমণ করে।

টাইফয়েড প্যারটাইফয়েড জ্বর

প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী টাইফয়েড জ্বরের আনুমানিক ১১-১২ মিলিয়ন আক্রান্ত হয় এবং প্যারাটাইফয়েড জ্বরে ৫ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হয়।বছরে ২ লাখ ১৫ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে।

টাইফয়েড বা টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ (typhoid fever):

সাধারণত রোগ-জীবাণু শরীরে প্রবেশের ১০ থেকে ১৪ দিন পর রোগের লক্ষণ সমূহ প্রকাশ পেতে থাকে। জ্বর এ রোগের প্রধান লক্ষণ যা প্রথম চার-পাঁচ দিন জ্বর বৃদ্ধি পায় জ্বর কখনো বাড়ে, কখনো কমে; তবে কোনো সময় সম্পূর্ণ ছেড়ে যায় না। এর প্রধান প্রধান

লক্ষণসমূহ

১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত টানা জ্বর হওয়া।

জ্বরের সঙ্গে মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা ও শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।

ক্ষুধামন্দা হওয়া সহ কারো কারো কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া ও বমি হতে পারে।

গা ম্যাজ ম্যাজ করা সহ রোগীর কফ বা কাশি হতে পারে ।

প্রচণ্ড পেটে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

দ্বিতীয় সপ্তাহে রোগীর পেটে ও পিঠে গোলাপি রঙের দানা দেখা দিতে পারে।

কারো কারো জ্বরের সঙ্গে কাশি হয়।

হার্ট রেট বা হৃদস্পন্দন কমে যেতে পারে।

ওষুধ চলা অবস্থায়ও সপ্তাহ খানেক জ্বর থাকতে পারে।

টাইফয়েড জ্বরের জটিলতাঃ

পরিপাকতন্ত্র থেকে রক্তক্ষরণ,

অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহ, মেরুদণ্ডে সংক্রমণ,

মস্তিষ্কে প্রদাহ,

পিত্তথলিতে সংক্রমণ,

নিউমোনিয়া,

শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোড়া,

স্নায়বিক সমস্যা

কিডনিতেও বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

টাইফয়েড জ্বরে ডায়াগনস্টিক বা ল্যাব টেস্টঃ

০১। Widal Test

০২। ICT for Salmonella

০৩। CBC

০৪। Urine R/E

০৫। Blood Cuture

টাইফয়েড জ্বরের ঔষধঃ

রেজিস্ট্যান্স বা প্রতিরোধক না হলে, ফ্লুরোকুইনোলন যেমন সিপ্রোফ্লক্সাসিন সবচেয়ে কার্যকরি। অন্যথায়, তৃতীয় প্রজন্মের সেফালোস্পোরিন যেমন সেফট্রায়াক্সন বা সেফোট্যাক্সিম কার্যকরি। মুখে খাওয়ার ঔষধের মধ্যে সেফিক্সিম ব্যবহার করা হয়।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে টাইফয়েড প্রাণঘাতী নয়।অ্যান্টিবায়োটিক যেমন অ্যাম্পিসিলিন, ক্লোরাম্ফেনিকল, অ্যামক্সিসিলিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন ইত্যাদি টাইফয়েড চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। চিকিৎসায় এ রোগে মৃত্যুর হার ১% এ নেমে আসে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও স্যালাইন গ্রহণ করতে হবে।

(ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া মেডিসিন নেয়া যাবে না)

টাইফয়েড রোগীর খাবারঃ

০১। বেশী বেশী তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে।

০২। ভিটামিন-সি জাতীয় খাবার খেতে হবে।

০৩। যেহেতু এন্টিবায়োটিক খেতে হবে তাই পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।

টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধ:

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টাইফয়েড জ্বরের জন্য নির্ধারিত ভ্যাক্সিন (টিকা) গ্রহণ করা রোগটি থেকে বেঁচে থাকার একটি উপায়। ইনজেকশন এবং মুখে খাওয়ার উভয় ধরনের ভ্যাক্সিন বাজারে পাওয়া যায়। ভ্যাক্সিন গ্রহণ করার ব্যাপারে চিকিৎসককের পরামর্শ নেওয়া দরকার। সব সময় ভ্যাক্সিন ১০০% কার্যকর হয়না তাই ভ্যাক্সিনের পাশাপাশি নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা দরকার।

সব সময় পরিষ্কার পোশাক পরে, নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি পান করে টাইফয়েড প্রতিরোধ করা যায়। এছাড়া, অবশ্যই হাত ভালোভাবে ধুতে হবে। ঘরের জিনিসপত্র নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস আলাদা করে রাখতে হবে। পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে। খাবার গরম করে খেতে হবে। বাইরের খাবার খেলে সব সময় সচেতন থাকতে হবে। অপরিষ্কার শাকসবজি ও কাঁচা-ফলমূল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার করতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে কোনোভাবেই যেন টয়লেটে ময়লা বা পানি জমে না থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির টয়লেট নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে খোলামেলা ও পরিষ্কার বাসায় রাখতে হবে। ডাঃ এস এম মেহেদী হাসান

 

ডাঃ এস এম মেহেদী হাসান: এমবিবিএস (ডি ইউ ) সি এম ইউ, লেকচারার: তাইরুন্নেসা মেমোরিয়াল মডিকেল কলেজ।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *