চিকিৎসকের পরামর্শমতামতস্বাস্থ্য সংবাদ

একটি বিশ্লেষণ: ডাক্তার-রোগী সম্পর্কের অবনতি….

দেশে এখন চিকিৎসকদের ব্যাপারে সবদিকেই নেতিবাচক ধারণা। পান থেকে চুন না খসতেই লেগে যাচ্ছে গণ্ডগোল। মারামারিও হচ্ছে হরহামেশাই। এতে আহত হওয়ার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে জীবন দিয়ে দিতে হচ্ছে। কিন্তু এর কারণ অনুসন্ধানে কারও কোনও চিন্তা নেই। যাদের ভাবার কথা, সেসব ব্যক্তিরা নিজের চেম্বার নিয়ে ব্যস্ত। টাকার পাহাড় গড়ছেন কেউ কেউ! আমার ব্যক্তিগত এবং পারিপার্শ্বিক অভিজ্ঞতা থেকে কিছু বিষয় খুঁজে বের করেছি, এগুলো নিয়েই লেখাটি!

রোগীকে সময় না দেওয়া

সিনিয়রদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, ২-৩ মিনিটে কোনোভাবেই একটা রোগী দেখা সম্ভব না। আপনি রোগীর কোনও কথা শুনবেন না, কোনও হিস্ট্রি নিবেন না, কোনও ক্রস কোয়েশ্চেন করবেন না, রোগীকে কথা বলতে দিবেন না। সম্পর্ক খারাপ হতে বাধ্য।

অযাচিত পরীক্ষা

যেসকল পরীক্ষা দরকার নেই, সেসব পরীক্ষা দেদারছে দেওয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে রোগীর সামর্থ্য বিবেচনা করা হচ্ছে না। একটা পৃষ্ঠায় যা থাকে সব রোগীকে করতে বলা হচ্ছে। এ থেকে রোগীর মনে দানা বাঁধছে অবিশ্বাস। কমিশন বাণিজ্য তো সর্বজনবিদিত! তবে এ কথা ঢালাওভাবে সব চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের প্রযোজ্য নয়। এ ক্ষেত্রে নীতিবান ও মানবিক চিকিৎসক এবং সহনশীল প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

অতিরিক্ত রোগী দেখা 

একজন ডাক্তার দিনে সর্বোচ্চ কয়জন রোগী দেখতে পারেন। রাতে কত সময় ধরে রোগী দেখতে পারেন? এ বিষয়সমূহ অবশ্যই নীতিমালার মধ্যে আসা উচিত। আমি মনে করি, তিন ঘণ্টার মধ্যে ৫০-৬০ জন রোগী দেখার কোনও মানেই হয় না। কয়েকজন অপরিণামদর্শী চিকিৎসকের অতি লোভী চর্চার কারণে গোটা চিকিৎসক সমাজের বদনাম হচ্ছে।

ডায়াগোনসিস না করা 

অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, রোগ কী তা নির্ণয় না করে কিছু গৎবাঁধা চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এতে রোগীকে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। বাড়ছে খরচ ভোগান্তি, কমছে আস্থা বিশ্বাস!

রেফার না করা

একজন ডাক্তার সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নন। তারপরেও অধিকাংশ ডাক্তার নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝতে চান না। রোগীকে রেফার করা নিজের ইগোর বিষয় মনে করেন। আর এতে বাড়তে থাকে রোগীর ভোগান্তি। গালি খেতে থাকে ডাক্তার সমাজ।

ব্যবসায়িক স্বার্থ

নিজের ক্লিনিক, নিজের ডায়াগোনস্টিক সেন্টার, নিজের চেম্বার—এসবের কারণে নিজের স্বার্থের দ্বন্দ্ব সবসময় লেগেই থাকে!

রোগীর প্রতি সহমর্মিতার অভাব

এক্ষেত্রেও রোগীকে সময় না দেওয়াই মূলত দায়ী! রোগী চিকিৎসকের সাথে একটু মন খুলে কথা বলতে পারেন না, নিজের কষ্টের কথা বলতে পারেন না। এই দরজা দিয়ে ঢুকে অন্য দরজায় বের হয়ে যেতে হয়। অবশ্য অনেক রোগী চিকিৎসকের সঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক গল্প জুড়ে দেন, এমন অভিজ্ঞতাও রয়েছে ঢের।

আরও অনেক বিষয় হয়তো জড়িত। গঠনমূলক সমালোচনা সাদরে গৃহীত! এর থেকে উত্তরণের পথ না পেলে সামনে আরও গভীর অন্ধকার অপেক্ষা করছে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *