চিকিৎসকের চেম্বারে যাওয়ার আগে জেনে নিন
চিকিৎসকের চেম্বারে যাওয়ার আগে জেনে নিন, আপনি ডাক্তার দেখাতে যাবেন বা কাউকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন? হাসপাতালে বা চেম্বারে? কিছু নিয়ম মানুন। দেখবেন ডাক্তার বিরক্ত হবেন না, আপনার চিকিৎসাও দ্রুত হবে। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে আপনার আগের চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র দ্রুত নিয়ে নিন। প্রায়ই দেখি রোগীরা আগের কাগজপত্র আনেননি।
জিজ্ঞেস করলে বলেন তাড়াহুড়ো করে আসছি, বা এগুলোতো অনেক আগের বা আগেরটা বাদ, আপনি নতুন করে চিকিৎসা করুন।
এগুলো খুবই লেইম অজুহাত এবং বিপজ্জনক। কেন? ব্যাখ্যা দেই- প্রথমত প্রায়সই রোগীরা ১০দিন, ২০ দিনের সিম্পটম নিয়ে আসেন, তাহলে কিভাবে তাড়াহুড়ো হল? আবার এত তাড়াহুড়ো করে এলেও কেউ কাথা, বালিশ, থালা, গ্লাস আনতে ভুলেন না, অথচ এগুলোর চেয়ে চিকিৎসার জন্য রোগীর আগের কাগজপত্র বেশি জরুরি।
আর কাগজ ২/৩ বছর বা তারো আগের হলেও তা গুরুত্বপূর্ণ।একবার ভেবে দেখুন, আপনি ৩০/৪০ বছরের পুরোনো দলিল কিন্তু হারান না, কারণ সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, তাহলে আপনি আপনার নিজের জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাগজ কেন হারাবেন? জমির মূল্য কি জীবনের চেয়েও বেশি? আবার অনেকেই যে বলেন আগের কাগজ বাদ, এটা খুবই হাস্যকর।
আপনি যদি আগে কোন কোয়াক থেকে ভুল ওষুধ খেয়েও থাকেন, সেটা তো আপনার শরীরেই গেছে, এখন আপনি বাদ বললেই তো আর বাদ হয়না, আর কিছু ওষুধের ক্ষেত্রে আগে কী খেয়েছেন জানাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসার জন্য, যেমন- এন্টিবায়োটিক, উচ্চ রক্তচাপ কমার ওষুধ, যে কোন স্টেরয়েড জাতীয়ওষুধ ইত্যাদি। আবার অনেক ক্ষেত্রে আমরা আগের রিপোর্টের সাথে বর্তমান রিপোর্ট তুলনা করি দ্রুত ডিসিশন নিতে, যেমন আগের এক্সরে, আগের ইসিজি ইত্যাদি। সুতরাং আপনার সব চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র আলাদা ফাইলে রাখুন এবং ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে প্রথমেই সাথে রাখুন।
আজ দ্বিতীয় যে বিষয়টা বলব, তা হলো চিকিৎসককে আপনার সমস্যা কিভাবে বলবেন। দয়া করে কখনোই ডাক্তারকে বলবেন না, আমার হার্টে সমস্যা, লিভার এ সমস্যা, স্ট্রোক করছে, পেটে , বুকে পানি জমছে ইত্যাদি। কেননা আপনার মুখের কথায় এগুলো চিকিৎসক বিশ্বাস করেন না , বরং আপনার রোগ কী সেটা বের করাই ডাক্তারের কাজ, সুতরাং রোগের নাম বলা বাদ দিয়ে সমস্যা বলুন। যেমন- আমার জ্বর ৫ দিন ধরে, আমার পেটে ব্যাথা, আমার শ্বাস কষ্ট ইত্যাদি। আপনাকে ডাক্তার লক্ষণ কত দিনের সেটি জিজ্ঞেস করবেন। সুতরাং সেটি আগেই ভেবে রাখুন। দয়া করে – অনেক দিন, ওই তো রোগ যতদিন ততদিন, ওই তো ডাক্তার দেখাইলাম তখন থেকে এমন ননস্পেসিফিক কথা বলবেন না। আপনি আনুমানিক কাছের সংখ্যা বলুন। যেমন- ১০-১২ দিন,মাস দুয়েক ইত্যাদি। অমুককে দেখাইছি তমুক বলছে, এরপর তমুক বলছে অমুক হইছে এগুলো বলা থেকে বিরত থাকুন।
ডাক্তার যা বলেন তা তার প্রেসক্রিপশনেই রয়েছে। সুতরাং আপনার বর্তমান ডাক্তারকে তা পড়তে দিন, তিনি কিছু জানতে চাইলে বলুন। প্রশ্নের পরিষ্কার জবাব দিন। যেমন- আপনার পায়খানা কেমন হয়? উত্তর প্রায়শই শুনতে হয়, খানাদানা নাই, পায়খানা কিভাবে হবে? এটা কিন্তু প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন হয়ে গেল। আপনার উত্তর হওয়া উচিত- পায়খানা স্বাভাবিক আছে, আগের মতই আছে, আগে দিনে একবার হত, এখন তিনদিনে একবার হচ্ছে ইত্যাদি। আপনার গুছানো উত্তর আপনার দ্রুত রোগ নির্ণয়ে চিকিৎসককে সাহায্য করবে এবং প্রয়োজনীয় টেস্ট নির্ধারণে সাহায্য করবে, এতে টেস্টের সংখ্যাও কমতে পারে কোনো কোনো ক্ষেত্রে।
ডা. রিজওয়ানুল ইসলাম মাকসুদ
মেডিকেল অফিসার, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ, সিলেট।