শিশুর ডায়রিয়া
শিশুর ডায়রিয়া
ডায়রিয়ার কারণে যখন কোনো শিশু এত বেশি পানি হারিয়ে ফেলে যে সে আর যথাযথভাবে তার দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড করতে পারে না, তখন পানিশূন্যতা বা Dehydration বলে। ডায়রিয়া ছাড়াও অতিরিক্ত বমি, জ্বর বা পানি কম খাওয়ার কারণেও পানিশূন্যতা হতে পারে। পানিশূন্যতার পরিমাণ যদি তীব্র হয়ে যায় তাহলে শুধু পানি বা তরল খেয়ে সেটিকে ঠিক করা সম্ভব হয় না, এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই শিশুকে হাসপাতালে নিতে হবে। তাই ডায়রিয়ার রোগী পানিশূন্যতায় আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে কি না সেটি ধরতে পারা জরুরি। পানিশূন্যতার শুরুর দিকে তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না, তাই ধরতে পারাটা কঠিন। তবে মুখ শুকিয়ে যাওয়া এবং পিপাসা বেড়ে যাচ্ছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখলে বুঝে ফেলা যায়। পানিশূন্যতা বাড়ার সাথে সাথে অন্যান্য লক্ষণ ও উপসর্গও বৃদ্ধি পায়।
অল্প মাত্রার পানিশূন্যতার লক্ষণ–
- চেহারা লাল হয়ে যাওয়া,
- অতিরিক্ত তৃষ্ণা,
- শুষ্ক, উষ্ণ চামড়া,
- প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া (১ মাসের কম বয়সিদের ক্ষেত্রে ছয়বারের কম ডায়াপার বা কাঁথা ভেজানো, এবং এর বেশি বয়সিদের ক্ষেত্রেআট ঘণ্টার ভিতরে একবারও কাঁথা না ভেজানো বা প্রস্রাব না করা ),
- শুষ্ক জিহ্বা এবং ঠোঁট,
- কান্নার সময় চোখের পানি বের হবে না।
মধ্যম থেকে তীব্র পানিশূন্যতার লক্ষণ–
- নির্জীব হয়ে পড়া,
- খিঁচুনি,
- পেট ফেঁপে থাকা,
- বাচ্চার মাথায় দেবে যাওয়া নরম স্থান তৈরি হওয়া,
- হার্ট ফেইল,
- দেবে যাওয়া চোখ,
- চামড়া কুঁচকে যাওয়া,
- খানিক চামড়া ধরে টেনে ছেড়ে দিলে আবার আগের অবস্থানে ফিরে যেতে অনেক সময় লেগে যাওয়া,
- দীর্ঘ এবং ঘন শ্বাস,
- পালস দ্রুত কিন্তু দুর্বল হয়ে পড়া।
তীব্র পানিশূন্যতার লক্ষণ–
- ওপরের সকল লক্ষণগুলোই আরও অনেক বৃদ্ধি পাওয়া,
- হাইপোভলিউমিক শকের বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেমন–
- চেতনা কমে যাওয়া,
- প্রস্রাবের পরিমাণ আরও কমে যাওয়া,
- শীতল হাত পা,
- আরও দুর্বল পালস (কবজিতে টের নাও পাওয়া যেতে পারে),
- রক্ত চাপও না পাওয়া যেতে পারে,
- হাত পা নীল হয়ে যাবে।
ডায়রিয়ার রোগী মারা যাওয়ার মূল কারণ হলো পানিশূন্যতার ফলে রোগী হাইপোভলিউমিক শকে চলে গিয়ে, সেখান থেকে কিডনি, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুসসহঅন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ফেইলরের কারণে। তাই এই পানিশূন্যতার লক্ষণগুলো চিনে রাখা উচিত সবারই, যেন দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানো যায়।